প্যাসেঞ্জার ভয়েসে সংবাদ প্রকাশের ৩৬৩ দিন পর দুদকের মামলা

দুলাভাই থেকে ঘুষ খাওয়া শিখেছিল বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আলতাব হোসেন

Passenger Voice    |    ১১:৩১ এএম, ২০২৩-০৯-২৭


দুলাভাই থেকে ঘুষ খাওয়া শিখেছিল বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আলতাব হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর বিআরটিএর দুর্নীতিবাজ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করলে সেই সময়ে প্যাসেঞ্জার ভয়েস শ্যালক বিআরটিএর এডি আলতাবেরও হিসাব চাইতে পারে, এক বছরে দুদকের দুই মামলা, তবুও খুঁটি নড়েনি বিআরটিএর এডি জলিলের এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল । সেই সংবাদের ৩৬৩ দিন পরে আলতাবের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এক সময়ে মিরপুর বিআরটিএর দালাল ছিলেন এই সহকারী পরিচালক আলতাব হোসেন। সেই সময়ে তারই ভগ্নিপ্রতি অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) আব্দুল জলিল ছিলেন মিরপুর বিআরটিএতে। দালালীর হাতেখড়ি হয়েছিল তখন। এমনকি দুলাভাইকে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণ ও অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়তে দেখেছিল আলতাব। শুধু জলিলের নয় আলতাবের বোন মাহমুদা নাছরিনের নামেও ছিল অবৈধ সম্পদের পাহাড়। 

ভগ্নিপতি ও বোনের অবৈধ সম্পদের পাহাড় দেখে বিআরটিএতে যোগ দেন এই আলতাব হোসেন। ঘুষ দুর্নীতিতে সফলও হয়েছেন তিনি। করেছেন পাহাড় পরিমান সম্পদ। দুদকের হাতেও গিয়েছে নথী। মামলাও হয়েছে তার নামে, অবৈধ সম্পদ ভোগ দখল করে রক্ষা হয়নি স্ত্রী মোছা. জিয়াসমীন আরারও। 

‘ঘুষ খাইলে কী হয়, জেল হয়, ফাঁসি তো আর হয় না’। এ মন্তব্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এক কর্মকর্তার। এমন দৃষ্টিভঙ্গির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীতে ছেয়ে গেছে পুরো সংস্থাটি। ফলে ক্ষতি হচ্ছে সরকার, ভুগছেন সেবাপ্রার্থীরা। তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই দুর্নীতিবাজদের। তারা দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছেন অপকর্ম। 

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই চালকের আসনে থাকেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের দিকনির্দেশনাতে চলে প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিআরটিএর স্টিয়ারিং অনেক বছর ধরেই দুর্নীতিবাজদের হাতে। তাদের কব্জা থেকে বিআরটিএকে মুক্ত করতে শীর্ষ কর্মকর্তা বর্তমান চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার (গ্রেড-০১) যারপরনাই চেষ্টা করছেন।  কিন্তু কিছুতেই আলতাব-জলিলের মতো দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে মুক্তি মিলছে না রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটির। বিআরটিএর বর্তমান প্রশাসন বিভাগ দুর্নীতি বন্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল যা ইতিমধ্যে সেবা প্রত্যাশিদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। 

আগামী পর্বে থাকছে, মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট রাকিবুল ইসলাম মিরপুর বিআরটিএর যন্ত্রণা।

সূত্র বলছে, সাড়ে তিন কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ ও পৌনে তিন কোটি টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) টাঙ্গাইল সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. আলতাব হোসেন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। সংস্থাটির উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রথম মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি মো. আলতাব হোসেনের দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১ কোটি ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ২৮৩ টাকার সম্পদ (স্থাবর ও অস্থাবর) গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রদান করেছেন। অন্যদিকে, দুদকের অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১ কোটি ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৩ টাকার সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রী মোছা. জিয়াসমীন আরাকে প্রধান আসামি ও তার স্বামী আলতাব হোসেনকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। বিবরণে দেখা যায়, জিয়াসমীন তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১ কোটি ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯ টাকার সম্পদের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রদান করেছেন। আর দুদকের অনুসন্ধানে তার নামে ২ কোটি ৪২ লাখ ২ হাজার ২৫১ টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। গৃহিনী হিসেবে এত সম্পদ করা অসংগতিপূর্ণ। প্রকৃত অর্থে এসব সম্পদ তার স্বামী মো. আলতাব হোসেনের দুর্নীতির টাকায় গড়েছেন। সে কারণে তাকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে এ মামলায়। তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এদিকে একই দিনে আলতাব হোসেন কৌশলে বিআরটিএর টাঙ্গাইল সার্কেল থেকে সিরাজগঞ্জ সার্কেলে বদলী হয়েছেন। বিআরটিএর প্রশাসন শাখার ২০০৩ নং স্বারকের অফিস আদেশে তাকে বদলী করা হয়। বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক শেখ মাহতাব উদ্দিন আহমেদকে এই সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) পদে চলতি দায়িত্ব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।